দেশে ও প্রবাসে নারী
রসুলপুর গ্রামের আমেরিকা প্রবাসী চৌধুরী সাহেবের একমাত্র ছেলের বিয়ে। এক সপ্তাহ ধরে পুরো বাড়ি লাইটিং, ডেকোরেশন করা হয়েছে। আত্মীয় স্বজন কাউকে দাওয়াত দিতে ত্রুটি হয়নি।
অনেকে এসেও গেছে। ভদ্রপাশা গ্রামের বিরাট ব্যবসায়ী লতিফ চৌধুরীর শিক্ষিতা, সুন্দরী মেয়ে রেবার সাথে বিবাহের বন্দোবস্ত হয়েছে।অর্থ মর্যাদায় মেয়ে পক্ষও কম নয়।
চৌধুরী সাহেব বৈঠকখানায় গ্রামের কয়েকজন মুরুব্বিদের সাথে আলাপরত। এমন সময় ঘটক ফটিক বিষন্ন বদনে তথায় উপস্হিত। চৌধুরী সাহেব জিজ্ঞাসিলেন,কি ব্যাপার ফটিক বিয়ে বাড়িতে এসেছো, মুখ মলিন কেন?
ফটিক আমতা আমতা করে বললো, চৌধুরী সাহেব আমাকে ক্ষমা করবেন,আমি বিষয়টি জানতাম না। মেয়ের বাবা কাল রাতে আমাকে ডেকে জানালেন, বিয়েতে মেয়ের মত নেই। সে নাকি অন্য একটি ছেলেকে পছন্দ করে।
কথাটা শুনে চৌধুরী সাহেব হতবাক হয়ে গেলেন। কি বললে ফটিক? বিয়ের কার্ড ছাপা হয়ে গেছে।আত্মীয় স্বজন দাওয়াত দেয়া হয়ে গেছে, আর এখন বিয়ে ভঙ্গ করতে হবে?
মুরুব্বিরা চৌধুরী সাহেবকে শান্তনা দিলেন। আল্লাহ যা করেন, ভালোর জন্য করেন। যদি বিয়ের পর এমন ঘটনা ঘটতো? তাহলে তো আরো খারাপ হতো। ভেঙে না পড়ে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে।
তারা পরামর্শ দিলেন, যেভাবে হোক ঐ গ্রাম থেকে অন্য কোন পাত্রীর ব্যবস্হা করতে হবে। আত্মীয় স্বজনদের কিছু জানানোর দরকার নেই। এরা মনে করবে একই কন্যার সাথে বিবাহ হচ্ছে। তাদের কথায় চৌধুরী সাহেব কিছুটা আশ্বস্ত হলেন।
সবাই মিলে ঘটক ফটিককে অনুরোধ করলেন, যেমন করে হোক পাত্রী জোগাড় করে,ঐ তারিখ মধ্যেই বিবাহের ব্যবস্হা করতে হবে।
স্কুল মাষ্টার রফিক সাহেবের তিন মেয়ে। বড় মেয়ে বিএ পাস করে গ্রামের স্কুলে শিক্ষকতা করছে। বিয়ের বয়স পার হলেও, কালো বলে বিয়ে হচ্ছেনা। ছোট দুই মেয়ে সুন্দরী হওয়ায় পাত্রপক্ষ এসে প্রায় সময় বড় মেয়ের বদলে ওদের পছন্দ করে ফেলে।
যদিও তারাও এখন বিয়ের উপযুক্ত, কিন্তু রফিক সাহেব বড় মেয়ে কুসুমকে রেখে কখনো ছোট মেয়েদের বিয়ে দিবেন না। কুসুমের অনেক দুঃখ, তার জন্য ছোট বোনদের বিয়ে হচ্ছেনা।বাবাকে সে বলে দিয়েছে, আমার জন্য ভাবনা বাদ দেও বাবা। তুমি ওদের বিয়ে দিয়ে দেও।
ঘটক ফটিক পেরেশান হয়ে পাত্রী খুঁজতেছে। কিন্তু এত অল্প সময়ের মধ্যে পাত্রী খুঁজে বের করা একই গ্রামে, তাও আবার ঐ তারিখ মতো বিয়ে,নিতান্তই অসাধ্য।
হঠাৎ মনে পড়লো রফিক সাহেবের মেয়ের কথা। কিন্তু ঐ মেয়ে তো কালো। আবার ভাবলো জীবনে অনন্ত একটা ভালো কাজ করে যাই। এই মেয়েটাকে যদি এই সুযোগে পাত্রস্হ করতে পারি,রফিক সাহেবের দোয়ার ভাগী হবো আজীবন।
যেই ভাবা সেই কাজ। রফিক সাহেবের সাথে আলাপ করলো, কিন্তু রফিক সাহেব ভয় পাচ্ছেন। আমেরিকা প্রবাসী ছেলের সাথে আমার কালো মেয়ের বিয়ে! এ কেমনে সম্ভব? ফটিক বললো সে ভার আমার উপরে।
এদিকে চৌধুরী সাহেবের ঘরে অস্হিরতা বিরাজ করছে। স্বামী স্ত্রী আর ছেলে কানাকানি করছেন আত্মীরা যেন শুনতে না পায়। কি হবে?ফটিক আসছে না কেন?কনের সন্ধান কি মিললো? মান সন্মান কি রক্ষা পাবে?
এমন সময় ফটিকের আসার খবর পেয়ে চৌধুরী সাহেব দৌড়ে বের হলেন,পাশে বসিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,কি খবর জলদি বলো। কুসুমের খবর শুনে বললেন আলহামদুলিল্লাহ।
কালো মেয়ে জেনে স্ত্রী এবং ছেলে একটু অসম্মতি জানালেও পরিস্হিতি বিবেচনা করে, সবাই রাজি হয়ে গেলেন।
নির্দিষ্ট দিনে চৌধুরী সাহেবের একমাত্র ছেলের সাথে বেশ জাকজমক ভাবে কুসুমের বিয়ে হলো। বিয়ের এক বছর পর, কুসুম স্বামীর সাথে বসবাসের নিমিত্তে আমেরিকা চলে গেলো। অতঃপর সুখে শান্তিতে কুসুমের দিন কাটতে লাগলো।
_শাহারা খান
কবি, লেখিকা, উপস্থাপিকা
যুক্তরাজ্য প্রবাসী ( বাড়ি-সিলেট)