আমি সাদামাটা একজন মেয়ে।বড় হয়েছি মধ্যবিত্ত পরিবারে।বাবা ছিলেন প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক।বিত্ত দিতে পারেননি সন্তানকে,তবে বিদ্যান করেছেন।ভাই বোন সকলেই লেখাপড়া করে চাকুরি করেছে।সেই সূত্র ধরে আমিও সরকারী প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষকতার চাকুরি করলাম।
আমার বড় বোনেরা লেখালেখি করতো ম্যাগজিন পত্র,পত্রিকায়।তাদের দেখে আমারও লেখালেখি করার খুব সখ হতো।তখন স্টুডেন্ট লাইফ।লেখালেখি সন্মন্ধে তেমন আইডিয়া নাই,শুধু সখ আছে।আমি মনে করতাম ছোট,ছোট করে কয়েকটা লাইন লিখলেই কবিতা/ছড়া হয়ে যায়।ছন্দ কিংবা ভাবের যে একটা মিল থাকা দরকার এ বিষয়ে কোন ধারণা ছিলোনা।তাই ঐ ভাবেই কোনরকম লিখে,লুকিয়ে,লুকিয়ে এই লেখাগুলো পাঠিয়ে দিতাম বিভিন্ন ম্যাগাজিন কিংবা পত্রিকার এড্রেসে।সপ্তাহ ঘুরে যখন পত্রিকাগুলো হাতে আসতো,অধীর আগ্রহে খুঁজতাম,আমার লেখা ছাপা হলো কিনা।প্রকাশ না হওয়ায় খুব কষ্ট পেতাম।কিন্তু হাল ছাড়িনি।চেষ্টা চালিয়ে গেছি।
আজও মনে আছে প্রথম যখন কোন এক ম্যাগাজিনে আমার লেখা ছাপা হলো,কি যে খুশি হয়েছিলাম।জনে,জনে বাড়ির সবাইকে দেখালাম এই দেখো আমার লেখা ছাপা হয়েছে।তারপর আস্তে,আস্তে সিলেটের ডাক,যুগবেরী,যায়যায় দিন,বিচিত্রা এমনি কয়েকটি পত্রিকা/ম্যাগাজিন ছাড়াও,স্হানীয় ভাবে কিছু পত্রিকা/ম্যাগাজিন বের হতো,সেগুলোতে লেখা প্রকাশ হতো।
তারপর লেখার স্পৃহা আরো বেড়ে গেলো।তেমন ভালো হয়তো কোনদিন লিখতে পারবোনা।তবে নিয়মিত লিখে যাচ্ছি।প্রবাস জীবনের প্রথম যখন প্যারিস আসলাম বিভিন্ন বাঙালী সংঘটনের সাথে যুক্ত হলাম।তখন হাতে গুনা কয়েকটা পত্রিকা/ম্যাগাজিন বের হতো প্যারিস থেকে।অল্পদিনেই লেখালেখির মাধ্যমে এদের কাছে পরিচিত হয়ে গেলাম।টেলিফোন করে উনারা লেখা দিতে বলতেন।এই লেখালেখির সুবাধে অনেক গুণীজনের সাথে সাক্ষাত হলো- কবি নির্মলেন্দু গুণ,কবি সৈয়দ সামছুল হক,উনার স্ত্রী আনোয়ারা সৈয়দ হকের সাথে।
তারপর দুটো একক বই এবং এ যাবত ছয়টি যৌথ কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করলাম।যে আমি কবিতার ক লিখতে জানতাম না,সে আমি যখন ছাপার অক্ষরে নিজের লেখাটা দেখি,তখন নিজে,নিজেই বিস্মিত হই।আসলে চেষ্টা করলে মানুষ যেকোন কাজে সফল হতে পারে।
শাহারা খান
০৯/১১/২০ ইং
লন্ডন প্রবাসী ( বাড়ি- সিলেট)