ভারতের যে মাটিতে আজ মুসলমানদেরকে উচ্ছেদ করার পায়তারা করা হচ্ছে, মুসলমানদের পোশাক-পরিচ্ছদের উপর ভিত্তি করে ধর্মীয় দাঙ্গা বাধানো হচ্ছে; সেই মাটি ব্রিটিশদের দানবীয় আক্রোশ থেকে রক্ষা করেছিল মুসলিম বীরগন। আজ ভারতীয়রা ভুলেই গিয়েছে তাদের অতীত।
ভারতের ইতিহাসের পাতা ওল্টালে যাদের নাম অবশ্যই পাওয়া যায় তারা মহাত্মা গান্ধী, সুভাষ চন্দ্র বসু, অরবিন্দ, জোহরলাল, মতিলাল, প্রমুখ। কিন্তু এদের সমতুল্য নেতা আতাউল্লাহ বুখারী, মাওলানা হুসেন আহমাদ, মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মাওলানা গোলাম হোসেন, মাওলানা ভাসানী, আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ এসব ব্যাক্তিবর্গ ইংরেজদের বিরুদ্ধে কঠোর বিরোধিতা করার জন্য বহু বার দীর্ঘমেয়াদী জেল খেটেছেন।
কলকাতা হাইকোর্টের ইংরেজ বিচারপতি নরম্যান একের পর এক অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামীকে নিষ্ঠুরভাবে ফাসির আদেশ দিয়েছিল। সেই নরম্যানকে মহম্মদ আব্দুল্লাহ একাই কোর্টের সিড়িতে সাহসের সাথে, ইংরেজদের দমন করার উদ্দেশ্যে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করেন। তাঁর নাম ইতিহাসের পাতায় পাওয়া যায় না। তারাসহ আরও অনেক মুসলিম বীরের ত্যাগের বিনিময়ে ধাপে ধাপে ভারত-বর্ষ স্বাধীন হয়েছে, যাদের নাম আজ ভারতের ইতিহাস থেকে মুছে দেওয়া হয়েছে।
-কাশ্মীরে ধারাবাহিক ভাবে মুসলমানদের উপর হত্যা যজ্ঞ, কর্ণাটকে বোরকা পরিধান নিয়ে নিষেধাজ্ঞা। এইসব ধর্মীয় উস্কানির মূল উদ্দেশ্য ভারত বর্ষ থেকে মুসলমানদের বিতাড়িত করা নয় কি? প্রশ্ন আসতেই পারে। এ কেমন আইন? যেখানে মেয়েরা উলঙ্গ ঘুরতে পারবে, কিন্তু একটা মেয়ে সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে ঘুরতে পারবে না? কি আশ্চর্য যুক্তি!
একবিংশ শতাব্দীতে এসে- একদল উশৃঙ্খল, জানোয়ারের সম্মুখে, একটি মেয়েকে নিজের পোষাকের জন্য হুমকির মুখে পড়তে হলো, একটি মেয়েকে স্রেফ আক্রমণ করছে তার পোশাকের কারণে, এ যেন অঘোষিত তীব্র সাম্প্রদায়িক নীতিমালার হিংস্র বহিঃপ্রকাশ। শিক্ষাঙ্গনে একদল উশৃঙ্খল ছাত্র রামের নাম নিয়ে অন্য ধর্মের একজন ছাত্রীকে ইভটিজিং করছে। দোষী ওই ছেলেগুলো নয়, দোষী তাঁরা যাঁরা ওদের মধ্যে ধর্মীয় সংকীর্ণতা ঢুকিয়েছে।
প্রশ্ন হলো- ভারতবর্ষে হঠাৎ করে এমন কি পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো, যাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে, সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ নজরুল, সেক্সপিয়র বা সমাজ সংস্কারক সৈয়দ আমীর আলী, বিদ্যাসাগর, রামমোহন, মর্ডান বিজ্ঞানে অবদান রাখা ইবনে সিনা, পেরিয়ার বা বিজ্ঞানী আব্দুল কালাম, নিউটন, স্টিফিন হকিংস, আইনস্টাইন বা দর্শনিক কার্ল মাস্ক এর নাম না নিয়ে, জয় শ্রী রাম এর নাম নিয়ে সাম্প্রদায়িক উষ্কানি দেওয়া হচ্ছে? কে এর মুল নায়ক? কারা করাচ্ছে এ সব?
-সবশেষে আমরা চাইবো যে, পৃথিবী মানুষের হোক! ধর্ম একটি সত্তা, দিনশেষে কিন্তু আমরা সবাই মানুষ, ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা, বর্ণবাদী, লিঙ্গবাদী, এসব আচরণ থেকে মানুষ হয়ে বেরিয়ে আসা উচিত।
“ধর্মকারার প্রাচীরে বজ্র হানো,
এ অভাগা দেশে জ্ঞানের আলোক আনো।”
লামিয়া ফেরদৌসী
শিক্ষার্থী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়