সিলেট শহরের মধ্যবিত্ত পরিবারে সাদিয়া রহমানের জন্ম।পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে সাদিয়া সবার ছোট।ছোটবেলা থেকে সব ভাই বোনের মধ্যে সাদিয়া ছিলেন দারুণ মেধাবী এবং প্রতিভাবান।পড়ালেখার পাশাপাশি লেখালেখি করা তার সখ।বড় হয়ে মাঝে মধ্যে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করেন।এসব কাজে সবসময় প্রেরনা জুগিয়েছেন তার বাবা।
ডিগ্রী পরীক্ষা পাশ করার পর সাদিয়ার বিয়ে হয়ে যায়,কানাডা প্রবাসী আলমের সাথে। বিয়ের আগেই সাদিয়া সরকারী প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেছিলেন। রিজাল্ট বের হয় বিয়ের পর। সাদিয়ার বিয়ের সময় পিতৃপক্ষের অনুরোধ ছিল,সাদিয়ার একান্ত ইচ্ছে চাকুরী করবে, মাষ্টার্স কমপ্লিট করবে।তার আবদার যেন শ্বশুর পক্ষ পূরণ করেন।তারা বলেছিল,এতে তাদের কোনই আপত্তি নেই। কিন্তু বিয়ের পর চাকুরীর এপয়েন্টমেন্ট লেটার আসতেই অনেকের চোখ কপালে উঠলো। অনেক অনুনয়,বিনয় করে সাদিয়া চাকুরিতে যোগ দিলেন।তারপর মাষ্টার্স করার ব্যাপারেও নানান বাঁধা।এসবের মুখে প্রথম বছর সাদিয়ার পক্ষে পরীক্ষা দেয়া সম্ভব হয়নি। পরের বছর আবার অনুনয়,বিনয় করে সাদিয়া মাষ্টার্স কমপ্লিট করেন। এরমধ্যে সাদিয়ার গর্ভে পরপর দুইটি ছেলে জন্মগ্রহন করে।ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস দুটো ছেলেই অর্টিস্টিক। একদিকে স্কুল অন্যদিকে ছোট বাচ্চা,সংসারের দায়িত্ব। শ্বশুরবাডির লোকেরা তাকে সাহায্য করেনা।কাজের মেয়েও সাদিয়ার কথা শুনেনা,শাশুড়ী আর বড় ঝা সংসারের হর্তাকর্তা।তাদের কথামতো চলে কাজের লোক। অনেকে আবার অর্টিস্টিক বাচ্চাদের নিয়ে কথা বলে।এতকিছুর পর সাদিয়া থেমে নেই।স্কুলে যাওয়ার সময় বাচ্চাদের বাবার বাড়ি রেখে, বিকেলে আসার সময় নিয়ে আসতেন। এভাবে স্কুল করতেন। এভাবে বি,এড ট্রেনিং সমাপ্ত করেন। শিক্ষকতা পেশায় দক্ষতা অর্জনের জন্য সাদিয়া জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ট শিক্ষিকার সন্মান অর্জন করেন।
এরপর সাদিয়া চলে আসেন স্বামীর কাছে কানাডায়।এখানে এসেও থেমে নেই,লেখালেখি করছেন নিয়মিত।বিভিন্ন সংগঠনের সাথে জড়িত। বিদেশের মাটিতে একলা হাতে সংসারের এতকাজ, তারপর দুটো অর্টিস্টিক বাচ্চা সামলানো অনেক কঠিন।বাচ্চা দুটো ১৫/১৬ বছরের।নিজেরা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে পারেনা। এইসব কাজে সাদিয়াকে সহযোগিতা করতে হয়।সারাক্ষন এদেরকে চোখে, চোখে রাখতে হয়।একটু এদিক,সেদিক হলেই কি থেকে কি করে ফেলবে। বিদেশ বাড়িতে আরো সাবধান হতে হয়। সরকারের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। বাচ্চাদের জন্য যদিও সরকারী ভাবে আলাদা কেয়ারার আছে,তবুও বাচ্চাদের গোসল, খাওয়া দাওয়া সব কাজ মাকেই করতে হয়।বাবার চেয়ে মায়ের উপর ওরা স্বাচ্ছ্ন্দ্য বোধ করে। ওদের জন্য স্পেশাল স্কুলের ব্যবস্হা আছে।যতক্ষন স্কুলে থাকলো,বাকী সবসময় মায়ের তত্তাবধানে থাকতে হয়। ওদের কাছে রাত দিন সমান। কখনো সারারাত জেগে থেকে,কখনো দিনে ঘুমায়। ওরা না ঘুমানো পর্যন্ত মা ঘুমাতে পারেননা। এতকিছুর পরেও সাদিয়ার মনে আক্ষেপ নেই। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানান। নিশ্চয় তিনি এই বোঝা বইতে পারবেন বলেই, আল্লাহ তাকে এই দায়িত্ব দিয়েছেন। নিয়মিত লেখালেখি করেন। তার প্রতিটি লেখা জীবনের কথা বলে,তাই পাঠক মন আকৃষ্ট করে। বিয়ের আগে পেয়েছেন বাবার অনুপ্রেরনা। বিয়ের পর পেয়েছেন স্বামীর প্রেরনা। স্বামীর সহযোগিতা এবং প্রেরনা পেয়েছেন বলেই,সাদিয়া হাসিমুখে এত কষ্ট সহিতে পেরেছেন।দুটো অর্টিস্টিক বাচ্চার জন্য স্বামী কখনো তাকে টু শব্দ বলেননি।নিজে বাহিরের কাজে ব্যস্হ থাকলেও,ঘরে যতক্ষন থাকেন সাংসারিক কাজে সাদিয়াকে সহযোগিতা করেন।
বিশ্বাসী সহযোদ্ধা সাথে থাকলে,নারীরাও পারে সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করে বিজয়ী হতে। বিজয়ী এই নারীর প্রতি সেলুট জানাই।
শাহারা খান
কবি, লেখিকা
লন্ডন প্রবাসি (বাড়ি- সিলেট)