দেশে ও প্রবাসে নারী
হাজার বছরের পুরুষশাসিত সমাজ কখনো একটি মেয়ে’কে একজন পূর্ণ মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। সমান অধিকারের প্রশ্নে আজীবন বঞ্চিত এবং ২য় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে তাকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে শুরু থেকে। একটি মেয়ে অথবা একজন নারী পরিপূর্ণ স্বাধীন সত্ত্বা হয়ে উঠতে পারেনি কোনদিন। অন্যায়, অবিচার, শোষণ আর অধিকারহীনতা’র যাঁতাকলে নিষ্পেষিত হয়ে আত্নপরিচয়হীন এক জীবন অতিবাহিত করেছে “নারী”।
ঘরের ভেতরে বন্দী করে সূর্যের আলোর মতই শিক্ষা ও জ্ঞানের আলো থেকেও দূরে রেখে স্বাবলম্বী হওয়া এবং নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রশ্নে শুরুতেই পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে “নারী”কে। শিক্ষাহীন- জ্ঞানহীন অবস্থায় হাজার বছর ধরে পিছিয়ে পড়তে পড়তে নিজের উপর আত্নবিশবাস ও আত্নসম্মানবোধ হারিয়ে ফেলা এক অসহায় সত্ত্বার নাম “নারী”।
নারী’কে কখনো তাঁর জ্ঞান ও মেধা প্রমাণের সুযোগ দেয়া হয়নি। স্রষ্টার সুবিচারে সহস্রবর্ষের পুরনো সেই দোযখসম পরিস্থিতি থেকে উত্তরোত্তর অগ্রসর হয়ে আজ নারী তাঁর আপন মহিমায় উজ্জ্বল হওয়ার সীমিত সুবিধা সত্ত্বেও প্রতিটি ক্ষেত্রে নারী তাঁর মেধা আর ট্যালেন্ট দিয়ে তাঁর যোগ্যতা আর সক্ষমতা প্রমাণ করে দিয়েছে। জ্ঞান, বিজ্ঞান, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ব্যাবসা, আর্ত মানবতার সেবা থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রে মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে আজ নারী’রা সুপ্রতিষ্ঠিত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা, বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, নভোচারী, বিচারক, স্কুল- কলেজের শিক্ষিকা, গৃহিণী, ইউটিউবার (ক্রিয়েটিভ আর্টিস্ট), সমাজ সেবিকা, আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মী, পোশাক শিল্পের কর্মী, ডাক্তার, আর্কিটেক্ট, রাজনীতিবিদ সহ প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীরা প্রতিনিয়ত তাদের মেধা, মনন, পরিশ্রম আর ট্যালেন্টের পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন। মনে রাখতে হবে, নারী শক্তি এবং নারী স্বাধীনতা স্থায়ী ও টেকসই করার জন্য নারীর অর্থনৈতিক মুক্তির কোন বিকল্প নেই।
উন্নত দেশ এবং সমাজের অগ্রসর অংশে নারীর জীবনমান ও স্বাধীনতার ক্ষেত্রে কিছুটা উন্নতি হলেও, অনগ্রসর সমাজের অনেক বড় অংশের বিপুল সংখ্যক নারী এখনো তাঁর নূন্যতম অধিকার ও প্রাপ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত অবস্থায় আছে। বলা যেতে পারে, স্বপ্ন পূরণের আরাধ্য পথের শুরুটা হয়েছে মাত্র, গন্তব্য এখনো অনেক দূরে। নারীর যোগ্যতা আছে, একাগ্রতা আছে, জ্ঞান আছে, মেধা আছে- শত বাধা পেরিয়ে নারীরা এগিয়ে যাবেই। মমতাময়ী নারীর পক্ষে মানবতার জয় হবেই।
মহান সৃষ্টিকর্তার নিকট সর্বদা কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করি, “প্রভু, তুমি আশরাফুল মাখলুকাত এর মর্যাদা দিয়ে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে মানুষকে সৃষ্টি করেছো। তোমার কাছে কোন ভেদাভেদ নাই, তোমার কাছে সবাই সমান। তুমি নর- নারী নির্বিশেষে সবার সৃষ্টিকর্তা, তুমি সবার পালনকর্তা। তোমার কাছে প্রার্থনা করি, তুমি সকলের প্রতি ন্যায়-বিচার কর, সবাইকে সম্মান ও আত্নপরিচয় নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য তুমি রহমত দান কর, বৈষম্যহীন ভাবে সকলকে মানুষের পরিচয়ে বেঁচে থাকার তৌফিক দান কর প্রভু, তোমার কাছে আর চাওয়ার কিছুই নেই।”