টনি স্টার্কের কথা মনে আছে তো? হ্যাঁ আমি আয়রন ম্যান সিনেমার কথাই বলছি। তিনি যেমন আয়রন ম্যান সিনেমায় কিডন্যাপ হয়ে গোহাতে থাকা অবস্থায়, নিউক্লিয়ার রিয়েক্টর বানিয়ে ফেললেছিলেন, যা কিনা কেবল মুভিতেই সম্ভব। তবে আজ এমনই একটি বাস্তব সত্য তুলে ধরতে যাচ্ছি। ঘটনাটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কার। ফেরুসিও ল্যাম্বরগিনির, যিনি ইতালিয়ান বিমান বাহিনীতে একজন মেকানিক হিসেবে কাজ করতেন। তার এই কাজের জন্য তাকে রোডস নামক এক নির্জন দ্বীপে থাকতে হয়েছিল। সেখানে বিভিন্ন ধ্বংসপ্রাপ্ত যানবাহনের পরিত্যক্ত যন্ত্রপাতি ছিল, যা দিয়ে তাকে পরিত্যক্ত যানবাহনগুলোকে মেরামত করতে হতো। এক কাজ শুরুর অল্প কিছু দিনের মধ্যেই তিনি সেখানকার সবচেয়ে দক্ষ মেকানিক হয়ে উঠলেন এবং সেখান থেকেই তিনি ল্যাম্বারগিনি ট্রাক্টর তৈরির সিদ্ধান্ত নেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বাড়ী ফিরে এসে ট্রাক্টর তৈরির কাজে মনোনিবেশ করেন ফেরুসিও ল্যাম্বরগিনি। সামরিক বাহিনীর অতিরিক্ত যন্ত্রপাতি কিনে তৈরি করলেন ট্রাক্টর। ল্যাম্বরগিনি বুঝতে পেরেছিলেন ইতালির মতো কৃষি প্রধান জায়গায় ট্রাক্টরের চাহিদা আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পেট্রোল দাম বহু গুণ বেড়ে যায়। জালানি খরচের বিষয়টি মাথায় রেখে ল্যাম্বরগিনি তৈরি করলেন ডিজেল চালিত ট্রাক্টর। যা বাজারে তখনকার প্রচুর নামডাক করে। আর অল্প সময়ের মধ্যেই তাঁর ভাগ্য প্রসন্ন হয়। সেই সময়কার বিখ্যাত ব্যান্ড ফেরারীর ২৫০ জিটি মডেলর একটি গাড়ির মালিক ফেরুসিও ল্যাম্বরগিনি।
ব্যান্ড ফেরারীর গাড়ি আবার তার জীবনে নতুন মোড় নিয়ে আসে। ফেরুসিও ল্যাম্বরগিনি ফেরারী গাড়িটিতে সমস্যা হওয়ায়, গাড়িটিকে মেরামত করার উদ্দেশ্যে ফেরারীর হেডকোয়ার্টার নিয়ে যান। সেখান থেকে গাড়িটি মেরামত করার পর তিনি দেখলেন যে পার্টসটি পরিবর্তন করে লাগানো হয়েছে, তা তিনি নিজের কোম্পানির ট্রাক্টর তৈরিতে ব্যবহার করেন। এটা দেখে তিনি ফেরারীর কর্ণধার এঞ্জো ফেরারীকে পার্টসটি বদলে দেবার জন্য বলেন।
এতে এঞ্জো ফেরারী ক্ষেপে গিয়ে বলে ‘তুমি ট্রাক্টর নির্মতা তুমি কি বুঝবে স্পোর্টস কার এর’। সেদিন এঞ্জো ফেরারীর আপমান ফেরুসিও ল্যাম্বরগিনি মেনে নিতে পাতেন নি। তবে মুখের উপর কিছু বলেন নি। ইতালির ছোট শহর সান্ত’আগাতা-য় তৈরি করলেন গাড়ি তৈরির কারখানা। সঙ্গে পেলেন জিয়োত্তো বিৎজারিনি, ফ্রাঙ্কো শ্যাগলিন, জান পাওলো দালেরাকে।
এঁরা তিনজনই ফেরারীর প্রাক্তন কর্মচারী। আর মাত্র চার মাসের মধ্যেই ফেরুসিও ল্যাম্বরগিনির নিজের কোম্পানির প্রথম স্পোর্টস কারটি। তার বানানো প্রথম ল্যাম্বরগিনি গাড়িটির মডেল ছিল” ল্যাম্বরগিনি ৩৫০জিটিভি”।
আত্মপ্রকাশ করল জেনেভা মটর শো-এ। প্রসংশা পেল সংবাদ মাধ্যমে। ক্ষতির মুখোমুখি হবে জেনেও প্রতিযোগিতায় ফেলার গাড়িটির দাম ফেরারীর চেয়ে বেশ কম ধরা হয়। যার ফলে দুইবছরের মধ্যেই বিক্রি ১২০ টি ল্যাম্বরগিনি বিক্রি হয়ে যায়। পাঁচশো ছোঁয়ার আগেই ল্যাম্বরগিনি ছুয়ে ফেলেন ফেরারীর আর্থিক সম্পত্তির পরিসংখ্যানকে।
সাইফুদ্দিন শেখ ফাহিম।